ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা (Preamble to the Indian Constitution)

প্রস্তাবনা বলতে বোঝায় সংবিধানের ভূমিকা বা মুখবন্ধ। অর্থাৎ প্রস্তাবনা হল সংবিধানের বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্ত রূপ যা থেকে আমরা সংবিধান রচয়িতাদের মনোভাব, উদ্দেশ্য এবং সংবিধানের উৎস, সংবিধানের আইনগত ও নৈতিক ভিত্তির পরিচয় পেয়ে থাকি।

Preamble :

WE, THE PEOPLE OF INDIA,having solemnly resolved to constitute India into a SOVEREIGN SOCIALIST SECULAR DEMOCRATIC REPUBLIC and to secure to all its citizens JUSTICE, social, economic and political; LIBERTY of thought, expression, belief, faith and worship; EQUALITY of status and of opportunity;and to promote among them all FRATERNITY assuring the dignity of the individual and the unity and integrity of the Nation; IN OUR CONSTITUENT ASSEMBLY this 26th day of November 1949, do HEREBY ADOPT, ENACT AND GIVE TO OURSELVES THIS CONSTITUTION”.

প্রস্তাবনা :

“আমরা ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথ গ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিকের জন্য
সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার;
চিন্তা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম ও উপাসনার স্বাধীনতা;
মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার সমতা সৃষ্টি
এবং তাদের সকলের মধ্যে
সৌভ্রাতৃত্বের ভাব গড়ে তুলে ব্যক্তির মর্যাদা এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিত করার জন্য আমাদের গণপরিষদে, আজ ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর এই সংবিধান গ্রহণ, বিধিবদ্ধ এবং নিজেদের অর্পন করছি।”

সার্বভৌমঃ রাষ্ট্র আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমস্ত বিষয়ে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়ে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে বৈদেশিক নিয়ন্ত্রণ মুক্ত।

সমাজতান্ত্রিকঃ একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদ ও অর্থের মালিকানা সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিমালিকানা থাকে না।

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কোনো জাতীয় ধর্ম থাকবে না, রাষ্ট্র কোনো ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে না, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো কর আরোপ করবে না। রাষ্ট্রের সকল নাগরিক স্বাধীনভাবে আপন ধর্ম পালন ও প্রচার করতে পারবে।

গণতান্ত্রিক জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা গঠিত সরকার রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করবে।

সাধারণতন্ত্র/প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রিক প্রধানের পদটি বংশানুক্রমিক নয় নির্বাচিত পদ হবে। যিনি রাষ্ট্রের সকল প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য নির্বাচিত হন। এছাড়া এখানে স্ত্রী-পুরুষ, বর্ণ, ধর্মনির্বিশেষে সকলেই নির্বাচন করার, নির্বাচিত হবার অধিকার ভােগ করে।

প্রস্তাবনার বিভিন্ন সংজ্ঞা/উক্তি

  • N. A. Palkivala- Identity Card of the Constitution
  • K. M. Munshi- Political Horoscope of the Indian Snostitution.
  • Thakurdas Bhargav- সংবিধানের আত্মা (Soul of the Constitution)
  • আর্নেস্ট বার্কার- “The Keynote of the Constitution”

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

  • ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনার জনক পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু। ১৯৪৬ সালের ১৩ ই ডিসেম্বর পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ভারতীয় সংবিধানের "উদ্দেশ্যেসমূহ সংক্রান্ত প্রস্তাব"(The Objective Resolution) -টি উত্থাপন করেন। ২২শে জানুয়ারি, ১৯৪৭-এর অধিবেশনে এই প্রস্তাব সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়, এবং পরবর্তীকালে এই অংশটি সংবিধানের "প্রস্তাবনা" আকারে লিপিবদ্ধ হয়।
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার ধারণা গৃহীত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে । আমেরিকার সংবিধান হল প্রস্তাবনা সম্বলিত প্রথম লিখিত সংবিধান।
  • প্রস্তাবনার ভাষা (“The language of Preamble”) নেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান থেকে।
  • ভারতীয় সংবিধান গ্রহণ ও কার্যকরী হওয়ার সময় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতকে বলা হয়েছিল সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।
  • বর্তমানে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতকে বলা হয়েছে সার্বভৌম সমাজতন্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।
  • প্রস্তাবনা, সংবিধানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ(Integral Part of Constitution)।
  • প্রস্তাবনা, আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য( enforceable)নয়[Preamble to the Constitution is non-justiciable]।
  • ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের আদর্শ গৃহীত হয়েছে ফরাসী বিপ্লবের আদর্শ থেকে।

প্রস্তাবনা সংশোধনঃ

  • ১৯৬০ সালে বেরুবাড়ি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যেহেতু প্রস্তাবনা সংবিধানের অংশ নয়, সেহেতু ৩৬৮ নং ধারার মাধ্যমে তা সংশোধনযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না ।
  • ১৯৭৩ সালে কেশবানন্দ ভারতী মামলাতে তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি প্রদর্শণ করেছিলেন যে প্রস্তাবনা সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ভারতীয় সংবিধানের ৩৬৮ নং ধারা অনুসারে তা সংশোধনযোগ্য। এই ঐতিহাসিক মামলায় সুপ্রিম কোর্টের অধিকাংশ বিচারপতি বেরুবাড়ি মামলার রায়কে ভ্রান্ত বলে অভিমত প্রকাশ করেন। সুপ্রিমকোর্ট রায় দেয় যে প্রস্তাবনা সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং তা সংশোধন করা যাবে ৩৬৮ নম্বর ধারা অনুসারে কিন্তু প্রস্তাবনার মূল গঠন (Basic Structure ) -এর পরিবর্তন করা যাবে না।
  • এই প্রস্তাবনা মাত্র একবার সংশোধিত হয়েছে ১৯৭৬ সালের ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে।
  • ৪২তম সংবিধান সংশোধনীতে প্রস্তাবনাতে তিনটি নতুন শব্দ সংযোজিত হয়- 'সমাজতান্ত্রিক', 'ধর্মনিরপেক্ষ' ও 'সংহতি' (socialist,secular and Integrity)।
  • প্রস্তাবনা সংশোধনের সময় ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী।