রাজ্যসভার গঠন (Composition of the Rajya Sabha) :

  • সংবিধানের ৮০নং ধারা অনুসারে অনধিক ২৫০ জন সদস্য নিয়ে রাজ্যসভা গঠিত হবে।
  • এঁদের মধ্যে ১২জন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনােনীত হয়ে থাকেন। সাহিত্য, বিজ্ঞান, চারুকলা ও সমাজসেবায় বিশেষ জ্ঞান বা বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে এরূপ ব্যক্তিদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি উক্ত ১২ জন সদস্যকে মনােনীত করেন।
  • বাকি ২৩৮ জন সদস্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে পরােক্ষভাবে নির্বাচিত হন। প্রতিটি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একক হস্তান্তরযােগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে রাজ্যসভার প্রতিনিধিদের নির্বাচন করেন। আর কেন্দ্রশাসিত অঞলের প্রতিনিধিগণ এই উদ্দেশ্যে গঠিত নির্বাচক-সংস্থার (electoral college) দ্বারা একক হস্তান্তরযােগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন।
  • বর্তমানে রাজ্যসভার মােট সদস্য সংখ্যা হল ২৪৫(২৩৩ জন নির্বাচিত + ১২ জন মনোনীত)।

রাজ্যসভার সদস্যদের যােগ্যতা :

  • ভারতের নাগরিক হতে হবে
  • অন্তত ৩০ বছর বয়স্ক হতে হবে
  • পার্লামেন্ট কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য যােগ্যতার অধিকারী হতে হবে।
  • আদালত কর্তৃক বিকৃত-মস্তিষ্ক বা দেউলিয়া বলে ঘােষিত ব্যক্তি, সরকারি কোনাে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি, বৈদেশিক কোনাে রাষ্ট্রের নাগরিকতা অর্জনকারী অথবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত কোনাে ব্যক্তি সদস্যপদের অযােগ্য বলে বিবেচিত হন।

রাজ্যসভা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

  • দ্বিকক্ষবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আইনসভার উচ্চকক্ষ হল রাজ্যসভা।
  • ১৯৫২ সালে এই কক্ষটি তৈরী হয়েছে।
  • উচ্চকক্ষের নাম প্রাথমিক ভাবে ছিল Council of States। এর হিন্দী প্রতিশব্দ 'রাজ্যসভা' ১৯৫৪ সালে গৃহীত হয়
  • রাজ্যসভা একটি স্থায়ী কক্ষ। তবে প্রতি দুবছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর গ্রহণ করেন এবং সমসংখ্যক সদস্য তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হন। প্রতিটি সদস্যের কার্যকালের মেয়াদ ৬ বছর।
  • প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি সংখ্যা তাদের জনসংখ্যার অনুপাতে স্বীকৃত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে সর্বাধিক(৩১ জন), মহারাষ্ট্র থেকে দ্বিতীয় সর্বাধিক(১৯ জন) সদস্য রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের ১৬ জন প্রতিনিধি রয়েছেন।
  • ১৯৯২ সালের সংশোধনী আইন অনুযায়ী ২০২৬ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার প্রতিনিধি সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
  • রাজ্যসভার সভাপতিঃরাজ্যসভার সভাপতিকে "Chairman" বলা হয়। ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদাধিকার বলে (ex-officio) রাজ্যসভার সভাপতি। রাজ্যসভার সদস্য না হওয়ায় ভোটাধিকার নেই। তবে নির্ণায়ক ভোট (Casting Vote)দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তার অনুপস্থিতিতে সভার কাজ পরিচালনার জন্য সদস্যগণ নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত করেন।
  • রাজ্যসভার সহসভাপতিঃ রাজ্যসভার সভাপতি অনুপস্থিতিতে সভার কাজ পরিচালনার জন্য সদস্যগণ নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত করেন। সহসভাপতি সরাসরি রাজ্যসভার কাছে দায়িত্বশীল। তিনি সভাপতির অধঃস্তন নন।
  • রাজ্যসভার কোনাে সদস্য লােকসভা কিংবা রাজ্য-আইনসভার সদস্যপদ গ্রহণ করলে তার রাজ্যসভার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়।
  • কোনাে নির্বাচিত সদস্যকে দল থেকে বিতাড়িত করা হলে তাঁর রাজ্যসভার সদস্যপদটিও বাতিল হয়ে যায়।
  • রাজ্যসভার অধিবেশন আহ্বান করেন রাষ্ট্রপতি।
  • বছরে কতগুলি অধিবেশন আহ্বান করা হবে সে সম্পর্কে সংবিধানে কিছু বলা নেই। তবে সংবিধানে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি একটি অধিবেশনের সমাপ্তির পর ৬ মাস অতিক্রান্ত হবার আগেই অপর একটি অধিবেশন আহ্বান করতে বাধ্য।
  • রাজ্যসভার মােট সদস্য সংখ্যার এক-দশমাংশের উপস্থিতিকে ‘কোরাম‘ বলে। এই কোরাম না হওয়া পর্যন্ত সভার কাজ শুরু হতে পারে না।