ভারতের মৃত্তিকা

মৃত্তিকা [ Soil ]:-ভু-ত্বকের ওপরের স্তরে অবস্থিত এবং সূক্ষ্ম শিলাখ্ন্ড দিয়ে গঠিত নরম ও শিথিল স্তরভাগকে মৃত্তিকা বা মাটি বলে ।

সূর্যতাপ, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, জলস্রোত প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ভূত্বকের শিলা চূর্ণবিচূর্ণ ও ক্ষয়ীভূত হয়ে গাছপালা ও জীবজন্তুর দেহাবশেষের সঙ্গে মিশে মৃত্তিকায় পরিণত হয় । জলবায়ু, উদ্ভিদ ও শিলাস্তরের প্রকৃতির ওপর মাটির গঠন নির্ভর করে ।

প্রকারভেদ:-মাটির রং, বুনোন [Texture], খনিজ পদার্থ ও জৈব পদার্থের পরিমাণ জলধারণ ক্ষমতা প্রভৃতির তারতম্যের ওপর নির্ভর করে ভারতের মাটিকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা হয়:-

  • পাললিক মৃত্তিকা বা পলিমাটি[Alluvial soil] :-
    • ভারতের সিন্ধু-গঙ্গা নদীর সমভূমি ও উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়। এই পলি মৃত্তিকা ভারতের প্রায় অর্ধেক (43.36%)ভূভাগে বিস্তৃত রয়েছে ।
    • পাললিক মৃত্তিকা হল অপসৃত মৃত্তিকা (transported soil or ex-situ) । অর্থাৎ এক্ষেত্রে শিলাচূর্ণ বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা এক জায়গা থেকে অপসারিত হয়ে অন্যত্র সঞ্চিত হয়ে মৃত্তিকার সৃষ্টি করেছে ।
    • নদী উপত্যকার পলিমাটি:নদীবাহিত পলি , বালি , কাদা প্রভৃতি উপত্যকায় সঞ্চিত হয়ে নদী উপত্যকার পলিমাটি সৃষ্টি হয় । এই মাটিতে প্রচুর পরিমাণে ধান , গম , পাট , তুলাে , আখ , ডাল , তেলবীজ , তামাক প্রভৃতি উৎপন্ন হয় ।
    • উপকূলের পলিমাটি :প্রধানত সমুদ্রবাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে এই মাটি সৃষ্টি হয় । এর মধ্যে বালি ও লবণের পরিমাণ বেশি থাকে এবং এর উর্বরাশক্তি মাঝারি ধরনের । ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে এই মাটি আছে । এই মাটিতে নারকেল ও সুপারি গাছ খুব ভালাে জন্মায় ।
    • শিলার বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের কারনেই পলিমৃত্তিকার রঙ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন এবং মৃত্তিকার গভীরতাও সব জায়গায় সমান নয়। মৃত্তিকার মধ্যে কোথাও বালির ভাগ বেশি আবার কোথাও পলির ভাগ বেশি।
    • এই মৃত্তিকায় ফসফরাস ও পটাসিয়ামের পরিমান বেশি। কিন্তু নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থের পরিমান কম হলেও কৃষির পক্ষে অত্যন্ত উর্বর।
    • খাদার মৃত্তিকা :- নদীর প্লাবন ভুমিতে নবীন পলি দ্বারা খাদার মৃত্তিকা গঠিত হয় । খাদার মৃত্তিকায় বালির ভাগ বেশি থাকে । খাদার মৃত্তিকা প্রতিবছর পলি আচ্ছাদিত হয় বলে এর উর্বরতা ভাঙ্গর মৃত্তিকা থেকে বেশি । সাধারণত গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য নদী তীরবর্তী অঞ্চলে খাদার মৃত্তিকা দেখা যায় ।
    • ভাঙ্গর মৃত্তিকা :- নদী-দূরবর্তী উচ্চভূমিতে প্রাচীন পলি দ্বারা ভাঙ্গর মৃত্তিকা গঠিত হয় । ভাঙ্গর মৃত্তিকায় কাদার ভাগ বেশি । ভাঙ্গর মৃত্তিকা প্রতিবছর পলি আচ্ছাদিত হয় না বলে এর উর্বরতা খাদার মৃত্তিকার থেকে কম । পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলে ভাঙ্গর মৃত্তিকা পরিলক্ষিত হয় ।
  • কৃষ্ণ মৃত্তিকা [Black soil]:-
    • প্রায় সমগ্র মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ গুজরাট, পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ, উত্তর কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশে কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায়। ভারতের প্রায় ১৭% অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। এই মাটি রেগুর [Regur] বা কৃষ্ম কার্পাস মৃত্তিকা নামেও পরিচিত । তেলেগু শব্দ রেগাডা থেকে এমন নাম ।
    • এই মাটি রাশিয়ার চেরনোজেম (chernozem) মৃত্তিকার সমতুল্য বলে এই মাটি আন্তর্জাতিক ভাবে 'ক্রান্তীয় চেরনোজেম' (tropical chernozem) নামে পরিচিত ।
    • লাভা গঠিত ব্যাসল্ট শিলা থেকে উৎপন্ন এই মৃত্তিকায় টাইটানিয়াম অক্সাইড টাইটানিফেরাস ম্যাগনেটাইট (titaniferous magnetite) ও জৈব যৌগের পরিমান বেশি থাকায় এই মাটি রঙ কালো ।
    • তামিলনাড়ুর অংশ বিশেষে নাইস ও শিস্ট জাতীয় শিলাও এই মৃত্তিকা সৃষ্টি করেছে ।
    • এই মৃত্তিকায় চুন ও কাদার ভাগ বেশি থাকায় এর জলধারণের ক্ষমতা বেশি ।
    • এই মৃত্তিকায় লোহা, চুন, ক্যালসিয়াম কার্বনেট ও ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি খনিজ বেশি থাকায় এই মাটি খুব উর্বর।
    • এই মৃত্তিকার প্রধান উৎপন্ন ফসল হল কার্পাস । এছাড়া দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলে আখ, চিনাবাদাম, তামাক (Virginia tobacco), রেড়ি (linseed) ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় ।
  • লোহিত মৃত্তিকা [Red soil]:-
    • ভারতের প্রায় 18.5% অঞ্চলে লোহিত মৃত্তিকা দেখা যায় । দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্গত তামিলনাড়ু , কর্ণাটক , অন্ধ্রপ্রদেশ , ওড়িশা প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চলে , ঝাড়খণ্ডের ছােটোনাগপুর মালভূমিতে , উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে ও মেঘালয় মালভূমিতে লাল মাটি দেখা যায় ।
    • পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূম জেলায় লোহিত মৃত্তিকা দেখা যায় ।
    • প্রাচীন গ্রানাইট ও নিস প্রভৃতি প্রাচীন শিলা ক্ষয়ীভূত হয়ে লোহিত মৃত্তিকার সৃষ্টি করেছে ।
    • লোহার (ফেরিক অক্সাইড) ভাগ বেশি থাকার জন্য এই মাটির রঙ লাল ।
    • লোহিত মৃত্তিকা কৃষ্ম মৃত্তিকার আশপাশে উপদ্বীপের অনেকাংশে বিস্তৃত রয়েছে ।
    • এই মৃত্তিকায় বালির ভাগ বেশি থাকায় এর জল ধারণের ক্ষমতা কম ।
    • নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও চুনের ভাগ সামান্য থাকায় এবং জৈব পদার্থের পরিমান খুব কম বলে এই মাটি অনুর্বর।
    • এই মাটি অনুর্বর হলেও জলসেচের সাহায্যে মিলেট, বাদাম, ভুট্টা, সোয়াবিন, আঙুর ও কফি উৎপন্ন হয়।
    • কর্ণাটক এবং কেরালা রাজ্যে লোহিত মৃত্তিকা অঞ্চলকে রাবার ও কফি চাষের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে ।
  • ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা [ Laterite Soil ]:-
    • ল্যাটিন শব্দ ল্যাটার(Later) এর অর্থ ইট। ইটের মতো শক্ত ও লাল রঙের বলে এই মাটির নাম ল্যাটেরাইট।
    • ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে উচ্চভূমির আবহবিকারগ্রস্ত প্রাচীন শিলাস্তর থেকে সিলিকা ও অন্যান্য পদার্থ অপসারিত হয়ে যায় এবং লৌহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড পড়ে থাকে। এই লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড বায়ুর সংস্পর্শে ল্যাটেরাইজেশন প্রক্রিয়ায় জমাট বেঁধে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।
    • এই মাটিতে লােহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড বেশি থাকে ।
    • কর্ণাটক, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, অসম এবং ঝাড়খন্ড রাজ্যের ছোটোনাগপুরের মালভুমিতে এই বিশেষ ধরনের মৃত্তিকা দেখা যায় ।
    • এই মৃত্তিকা অত্যন্ত অনুর্বর এবং এখানে কৃষিকাজ খুব একটা হয় না ।
    • জলসেচ ও সার প্রয়োগে এখানে চা, কফি ও রবার চাষ করা হয় ।
    • অসম্ভব ভূমিক্ষয়ের দরুন ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা অঞ্চলে খোয়াই ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় ।
  • পার্বত্য মৃত্তিকা [Hill soil]:-
    • প্রধানত পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয় এবং নীলগিরি পর্বতের অরণ্যময় পার্বত্য অঞ্চলে এই ধরণের মৃত্তিকা দেখা যায় ।
    • হিমবাহ বাহিত প্রস্তরময় মৃত্তিকা ও অরণ্য অঞ্চলের অনুর্বর পডসল মৃত্তিকা এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ।
    • এর অধিকাংশ মৃত্তিকা গভীর, প্রস্তরময় ও অনুর্বর হওয়ার জন্য এই মৃত্তিকা ফসল উৎপাদনের পক্ষে একেবারে উপযোগী নয় ।
    • পডসল মৃত্তিকা :- রুশ শব্দ পডসল এর মানে হল ধূসর । সরলবর্গীয় বনভুমির লতাপাতা, কান্ড, ফুল, ফল প্রভৃতি পচে জৈবাংশ বা হিউমাসে রূপান্তরিত হয়ে একধরণের অম্ল প্রকৃতির ধূসর রঙের অনুর্বর মাটির সৃষ্টি হয়, একে পডসল মৃত্তিকা বলা হয় । পশ্চিম হিমালয় ও নীলগিরি পর্বতের উঁচু পার্বত্য অংশে পডসল মৃত্তিকা দেখা যায় ।
    • রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে এই মৃত্তিকায় চা, কফি, বিভিন্ন ধরনের মশলা ও ফল চাষ করা হয়।
  • বালুকাময় মরু মৃত্তিকা [Sandy desert soil]:-
    • এই মৃত্তিকায় বালি, নুড়ি ও কাঁকর এবং পাথরের ভাগ বেশি, কিন্তু জৈব পদার্থের ভাগ কম । ফলে মৃত্তিকাটি কিছু পরিমাণে অনুর্বর ।
    • বালির ভাগ বেশি বলে এই মৃত্তিকার জল ধারণ ক্ষমতা কম।
    • এই মৃত্তিকা বাদামি হলুদ বা হালকা হলুদ বর্ণের হয়।
    • স্বল্প বৃষ্টিপাত ও অধিক বাষ্পীভবন যুক্ত অঞ্চলে অধিক বাষ্পীভবনের কারণে কৈশিক প্রক্রিয়ায় ভূ-অভ্যন্তরের লবণ উপরে উঠে এসে মৃত্তিকা স্তরে সঞ্চিত হয় বলে এই মৃত্তিকা লবণাক্ত হয়। এই মাটিকে সিরোজেম বলে ।
    • রাজস্থানের মরুভূমি, গুজরাটের কচ্ছের রন অঞ্চল, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কিছু কিছু অংশে এই মাটি দেখা যায়।
    • জল ধারণ ক্ষমতা কম ও অনুর্বর হওয়ার কারণে মরু মৃত্তিকায় কৃষিকাজ ভালো হয়না। তবে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে ও জলসেচের সাহায্যে এই মৃত্তিকায় গম, যব, মিলেট, কার্পাস, ডাল, তৈলবীজ ইত্যাদি ফসল চাষ করা হয়।
  • উপকূলীয় মৃত্তিকা [Coastal soil]:-
    • সমুদ্র উপকূলের নিকটবর্তী নীচু জায়গাগুলির মাটি লােনা । প্রতিদিন জোয়ারের সময় সমুদ্রের লােনা জল চলে আসে বলে মাটি লবণাক্ত হয়ে যায় । এই মাটিতে সূক্ষ্ম পলি , কাদা প্রভৃতি থাকে ।
    • পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চল , কচ্ছের রাণ অঞ্চল , মহানদী , গােদাবরী প্রভৃতি নদীর বদ্বীপের কিছু স্থানে এই মাটি দেখা যায় ।

লবণাক্ত ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা (Saline and Alkaline Soils)

  • এই মাটির প্রধান বৈশিষ্ট হল এই মাটিতে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং সোডিয়াম সালফেটের উপস্থিতি । যার ফলে এই মাটি লবণাক্ত ও ক্ষারীয় প্রকৃতির হয় ।
  • তরলের কৈশিক ধর্মের (Capillary action) ফলে মাটির ওপরে সাদা লবণের একটি আস্তরণ পরে।
  • রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং মহারাষ্ট্রে এরকম মৃত্তিকা দেখা যায় ।
  • এই মাটি বিভিন্ন অঞ্চলে রে (reh), কালার (kallar), উষর (usar), রাকার (rakar), থুর (thur), কার্ল(karl) এবং চোপান (chopan) নামে পরিচিত ।
  • এই মাটি বেলে থেকে বেলে-দোআঁশ প্রকৃতির হয় । এতে নাইট্রোজেন এবং ক্যালশিয়াম থাকে না এবং এর জলধারণ ক্ষমতা খুব কম ।
  • এই মাটিতে জিপসাম (Gypsum) বা চুন প্রয়োগ করে এবং সেচ ব্যবস্থা উন্নতির মাধ্যমে এই মাটির উর্বরতা পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায় । এছাডা লবঙ্গ (berseem), ধনেপাতা প্রভৃতি লবণ-প্রতিরোধী ফসল জমির উর্বরতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

পিটি ও জলাভূমি অঞ্চলের মৃত্তিকা (Peaty and Marshy Soils)

  • ভারী বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে যেখানে জলনিকাশী ব্যবস্থা সেভাবে নেই সেই অঞ্চলে পিটি মৃত্তিকার সৃষ্টি হয় ।
  • এই মৃত্তিকা বর্ষাকালে জলমগ্ন এবং প্রধানত ধান চাষ করা হয় ।
  • এই মাটিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকে, অত্যন্ত লবণাক্ত হয় । এতে ফসফরাস এবং পটাশ থাকে না ।
  • কেরালার কোট্টায়াম ও আলাপ্পুঝা জেলার কিছু অংশে, পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে; মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা ও কাবেরী নদীর ব-দ্বীপে এবং কচ্ছের রণে এই মাটি দেখা যায় ।

কারেওয়া মৃত্তিকা (Karewa Soils)

  • কাশ্মীর উপত্যকা এবং জম্মু ডিভিশনের ডোডা জেলার ভদ্রা উপত্যকায় (Bhadarwah Valley) কারেওয়া মাটি দেখা যায় ।
  • সূক্ষ্ম পলি, কাদা, বালি ও বোল্ডার নিয়ে এই মাটি গঠিত ।
  • ভূতত্ববিদদের মতে প্লিস্‌টোসিন যুগে (Pleistocene Period) সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকা জলমগ্ন ছিল । পরবর্তীকালে ভূ-আন্দোলনের ফলে বারামুলা গিরিখাত সৃষ্টি হয় এবং হ্রদটি এই গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় । এভাবে সঞ্চিত বস্তুগুলির জমা হওয়াকে কারেওয়া বলে ।
  • এই মৃত্তিকায় স্তন্যপায়ী প্রাণীর জীবাশ্ম ও পিট কয়লা পাওয়া যায় ।
  • বিতস্তা নদী (Jhelum) এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ।
  • এই মাটিতে জাফরান (Saffron), আলমন্ড, ওয়ালনাট, আপেল এবং ফলমূল প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয় ।
  • পামপুর, কুলগাম ও পুলওয়ামা উৎকৃষ্টমানের জাফরান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ।

ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ [Cause of Soil Erosion in India ]:-মৃত্তিকা ক্ষয় ভারতের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা । ভারতে ভুমি ক্ষয় সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে । যথা (ক) প্রাকৃতিক কারণে ভূমিক্ষয় (খ) মানুষের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিক্ষয় ।

প্রাকৃতিক কারণে ভূমিক্ষয় :-বায়ুপ্রবাহ, ঝড়, বৃষ্টিপাত, নদী-প্রবাহ, বন্যা, নদী ও সমুদ্র স্রোতের পরিবর্তন প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণের ফলে ভূমিক্ষয় হয় ।

জলপ্রবাহ ক্ষয় (Water Erosion)জলপ্রবাহ দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয় তিন প্রকারের –

  1. পত্রক্ষয় বা স্তর ক্ষয় (Sheet Erosion): এক্ষেত্রে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কোনো বিশাল অঞ্চলের মাটির ওপরের স্তর কমবেশি সমানভাবে ধুয়ে যায় । ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি এবং সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি অঞ্চলে এভাবে ভূমিক্ষয় হতে দেখা যায় ।
  2. নালিক্ষয় বা ক্ষুদ্রখাত ক্ষয় (Rill Erosion):এক্ষেত্রে মাটির স্তর জলধারার আঘাতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মাটিতে আঙুলের আকৃতির খাঁজ (Finger-shaped grooves) বা নালির সৃষ্টি করে । ভারতে হিমালয়সহ বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশে এরকম ভূমিক্ষয় হতে দেখা যায় ।
  3. প্রণালী ক্ষয় বা খাত ক্ষয় (Gully Erosion): এক্ষেত্রে নালি বা ক্ষুদ্রখাতগুলি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে বৃহৎ খাতে পরিণত হয় । ফলে মাটি চাষবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে । এরকম ভূমিক্ষয়যুক্ত মাটিকে ব্যাডল্যান্ড (badland) বলে । মধ্যপ্রদেশের তম্বল উপত্যকা, হিমালয়ের পাদদেশ, গুজরাট ও আরাবল্লী পর্বতের পূর্বাংশে এধরণের ভূমিক্ষয় বেশি দেখা যায় । চম্বল উপত্যকায় এরকম বৃহৎ খাতবিশিষ্ট অঞ্চলকে ' বীহর' বলে । পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতন অঞ্চলে এই ধরণের ভূমিক্ষয়কে ' খোয়াই' বলে ।

বায়ুপ্রবাহ ক্ষয় (Wind Erosion)বায়ুপ্রবাহ ক্ষয় সাধারণত রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং গুজরাটের মরুভূমি এবং মরুপ্রায় অঞ্চলে বেশি দেখা যায় । বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কাজের জন্য উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং পশ্চিম মধ্যপ্রদেশের হাজার হাজার হেক্টর উর্বর জমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।

মানুষের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিক্ষয়

  • নির্বিচারে গাছপালা কাটা:-নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে মাটি আলগা হয়ে যায় এবং সহজেই মৃত্তিকা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়
  • অতিরিক্ত পশুচারণ:-কোনও স্থানে অতিরিক্ত পশুচারণের জন্য সেই স্থানের মাটি আলগা হয়ে যায় এবং সহজেই মৃত্তিকা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়
  • স্থানান্তর কৃষি বা ঝুম চাষ (Shifting Cultivation)উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে (ত্রিপুরা, অসম, মেঘালয়) চাষ-আবাদ করার জন্য বনজঙ্গল কেটে এবং পুড়িয়ে দিয়ে পরিস্কার করা হয় । এইভাবে চাষবাস করাকে জুম বা ঝুমচাষ (Jhum Cultivation) বলে । এর আরেক নাম হল slash and burn cultivation । এই পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন এক জায়গায় চাষবাস করা হয় না, কয়েক বছর পর জমির উর্বরতা কমে গেলে অন্য আরেক জায়গার বনজঙ্গল কেটে পুড়িয়ে দেওয়া হয় । তাই এই পদ্ধতিতে চাষবাসের আরেক নাম স্থানান্তর কৃষি (Shifting Cultivation) । ঝুমচাষের ফলে উত্তর-পূর্বের অঞ্চল ভূমিক্ষয়ের কবলে পড়েছে ।

ভারতের প্রধান মৃত্তিকা গবেষণাগারটি উত্তরাখন্ডের রাজধানী দেরাদুনে অবস্থিত ।