বারিমণ্ডল [Hydrosphere]পৃথিবীর পৃষ্ঠের মোট আয়তনের (৫১ কোটি ৫৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার ) ২৯ শতাংশ স্থলভাগ এবং বাকি ৭১ শতাংশ জলরাশি দ্বারা আবৃত । এই জলভাগেরই ভৌগলিক নাম বারিমণ্ডল [Hydrosphere]। মহাসাগর, সাগর, নদী, হ্রদ, খাল বিল প্রভৃতি ভূ-পৃষ্ঠের সকল জলভাগই এই বারিমন্ডলের অন্তর্গত।
মহাসাগর
সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ (Landforms of the Seafloor)ভূপৃষ্ঠের উপরের ভূমিরূপ যেমন উঁচু-নিচু তেমনি সমুদ্র তলদেশও অসমান। কারণ সমুদ্রতলে আগ্নেয়গিরি, শৈলশিরা, উচ্চভূমি ও গভীর খাত প্রভৃতি বিদ্যমান আছে। ফ্যাদোমিটার (Fathometer) যন্ত্রটি দিয়ে শব্দতরঙ্গের সাহায্যে সমুদ্রের গভীরতা মাপা হয়। ঢাল ও গভীরতার পার্থক্য অনুসারে সমুদ্রের তলদেশের ভূমিরূপকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা হয়-
সমুদ্রস্রোত [Ocean Current] :-পৃথিবীর আবর্তন, নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্র জলের লবণত্ব, ঘনত্ব ও উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য সমুদ্রের জল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়মিতভাবে সারাবছর নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয় । সমুদ্র জলের এই গতির নাম সমুদ্রস্রোত [Ocean current] ।
সমুদ্রস্রোতের উত্পত্তির কারণ :
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোতগুলির নাম :-
নিরক্ষীয় স্রোত :-আটলান্টিক মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে দুটি উষ্ণ স্রোত, উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত উৎপন্ন হয়। দুটি স্রোতই পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়।
নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত:-উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্য দিয়ে একটি অপেক্ষাকৃত ক্ষীণ স্রোত পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। একে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বা বিপরীত স্রোত বলা হয়। গিনি উপসাগরে এই স্রোত গিনি স্রোত নামে পরিচিত।
কুমেরু স্রোত :-কুমেরু মহাসাগর থেকে শীতল কুমেরু স্রোত পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে এবং উওর দিকে প্রবাহিত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায় । একটি ফকল্যান্ড স্রোত এবং অপরটি বেঙ্গুয়েলা স্রোত।
ফকল্যান্ড স্রোত:- কুমেরু স্রোতের অপ্রধান শাখাটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়। ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এর নাম ফকল্যান্ড স্রোত।
বেঙ্গুয়েলা স্রোত [Benguela Current]:কুমেরু স্রোতের প্রধান শাখাটি কুমেরু স্রোত নামে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে প্রতিহত হয়ে বেঙ্গুয়েলা স্রোত নামে উত্তরমুখী হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে। উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে এই স্রোত দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।
ব্রাজিল স্রোত (উষ্ণ) :-বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত স্রোত পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের সেন্ট রক অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়। দক্ষিণের শাখাটি ব্রাজিল স্রোত নামে ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণদিকে অগ্রসর হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হয় ।
উপসাগরীয় স্রোত [Gulf Stream Current]:-বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহের উত্তরের শাখাটি ক্যারাবিয়ান সাগর অতিক্রম করে আরও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে। মেক্সিকো উপসাগর থেকে ফ্লোরিডা প্রণালীর মধ্য দিয়ে এই স্রোত উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। মেক্সিকো উপসাগরে উৎপত্তি হওয়ায় এই স্রোতের নাম উপসাগরীয় স্রোত । এই স্রোত আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়- ক্যানারী স্রোত, উত্তর আটলান্টিক স্রোত এবং তৃতীয় শাখাটি উপসাগরীয় স্রোত নামে গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিম পাশ দিয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে লাব্রাডার স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।
ক্যানারী স্রোত :- উপসাগরীয় স্রোতের দক্ষিণ শাখাটি ক্যানারী স্রোত নামে পর্তুগাল উপকূলে বাধা প্রাপ্ত হয়ে প্রথমে দক্ষিণে ও পরে পশ্চিমে বেঁকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।
উত্তর আটলান্টিক স্রোত :-উপসাগরীয় স্রোতের দ্বিতীয় বা মাঝের শাখাটি উত্তর-পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের পাশ দিয়ে অগ্রসর হয়ে নরওয়ের উত্তর উপকূলে এসে শেষ হয়। এই শাখাটি উত্তর আটলান্টিক স্রোত নামে পরিচিত।
ল্যাব্রাডার স্রোত [Labrador Current]:-মেরু বায়ুর প্রভাবে সুমেরু অঞ্চলের উত্তর মহাসাগর থেকে একটি শীতল স্রোত গ্রীণল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল দিয়ে শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে ও আর একটি স্রোত গ্রীণল্যান্ডের পূর্ব উপকূল দিয়ে গ্রীণল্যান্ড স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে । উভয় স্রোত দুটি ল্যাব্রাডার উপদ্বীপের কাছে মিলিত হয় এবং শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত নামে উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকুল দিয়ে দক্ষিণদিকে অগ্রসর হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে। তারপর নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে এসে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।
প্রশান্ত মহাসাগর হল পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর । এর মোট আয়তন পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগের মিলিত আয়তনের চেয়েও বেশি । প্রশন্ত মহাসাগরকে দেখতে অনেকটা ত্রিভূজের মতো । প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোতগুলির বৈশিষ্ট্য লক্ষ করলে দেখা যায় (i) এই মহাসাগরের উত্তরভাগের স্রোতসমূহ ঘড়ির কাঁটার দিকে আবর্তিত হয় । (ii) কিন্তু দক্ষিণভাগের স্রোতসমূহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে আবর্তিত হয় ।
নিরক্ষীয় স্রোত :-আটলান্টিক মহাসাগরের মতো প্রশান্ত মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে দুটি উষ্ণ স্রোত, উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত উৎপন্ন হয়। দুটি স্রোতই পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়।
পেরু স্রোত বা হ্যামবোল্ড স্রোত :কুমেরু মহাসাগরের শীতল স্রোতের একটি শাখা পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বাধা পেয়ে চিলির উপকূল ধরে উত্তরদিকে পেরু উপকূলে এসে পেরু স্রোত বা শীতল হ্যামবোল্ড-স্রোত নামে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।
নিঊ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত (ঊষ্ণ) : পেরু স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত স্রোত পশ্চিমদিকে অগ্রসর হয়ে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়। (ক) একটি শাখা দক্ষিণদিকে ঘুরে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল ও নিঊজিল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় । (খ) অপর একটি শাখা উত্তর-পশ্চিমদিকে গিয়ে এশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে এবং পূর্ব-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে বাধা পায় এবং উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় । (গ) তৃতীয় শাখাটি উত্তর অস্ট্রেলিয়া ও নিউগিনির মধ্য দিয়ে ভারতমহাসাগরে প্রবেশ করে।
কুরোশিয়ো বা জাপান স্রোত:উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ইন্দোনেশিয়ার কাছে এসে উত্তরমুখী হয়ে এশিয়া মহাদেশের জাপান ও তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল ধরে জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোত নামে উত্তরে প্রবাহিত হয় । এই স্রোত কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দুভাগে বিভক্ত হয়। একটি শাখা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বেরিং স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় এবং ওপর শাখাটি হল উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত।
উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত:জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের অপর শাখাটি পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত নামে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়।
ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত:উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতটি কানাডার পশ্চিম উপকূলে পৌঁছানোর পর দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। একটি শাখা দক্ষিণ দিকে বেঁকে ক্যালিফোর্নিয়ার পাশ দিয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে শীতল ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত নামে প্রবাহিত হয় এবং আরও অগ্রসর হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।
আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত:উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতের অপর শাখাটি আরও উত্তরে অগ্রসর হয়ে আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত নামে আলাস্কা উপকূল ও অ্যালুশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বরাবর প্রবাহিত হয় । এই স্রোত পরে শীতল বেরিং স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।
বেরিং স্রোত (শীতল):মেরুবায়ুর প্রভাবে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের সুমেরু অঞ্চল থেকে আগত সুমেরু স্রোতের কিছু অংশ বেরিং প্রণালীর মধ্যে দিয়ে বেরিং স্রোত নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এই স্রোত আরও দক্ষিণে অগ্রসর হলে উষ্ণ জাপান স্রোতের উত্তর শাখার সঙ্গে মিলিত হয় । শীতল বেরিং স্রোত ও উষ্ণ জাপান স্রোতের মিলনের ফলে এই অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও ঝড়বৃষ্টির সৃষ্টি হয় ।
নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতিস্রোত (উষ্ণ):উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে একটি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও ক্ষীণ স্রোত পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় যা নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতি স্রোত নামে পরিচিত ।
ভারত মহাসাগর আয়তনে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ । ভারত মহাসাগরের উত্তরে এশিয়া মহাদেশ, পশ্চিমে আফ্রিকা মহাদেশ এবং পূর্বে ওশিয়ানিয়া মহাদেশ দিয়ে ঘেরা । ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশ স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা থাকায় ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখানে সমুদ্র স্রোতের গতি অনেকটা পাল্টে যায় । গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলে মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ও শীত কালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় । এজন্য ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশের স্রোত প্রধানত মৌসুমি বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশের স্রোতগুলি অনেকটা আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতের মতো আবর্তন করে ।
শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত :-কুমেরু মহাসাগর থেকে আগত শীতল কুমেরু স্রোতের একটি অংশ পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে উত্তরমুখী হয়ে শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত নামে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত নিরক্ষরেখার কাছে পৌঁছুলে দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে বেঁকে গিয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় । এই মিলিত স্রোত পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে মাদাগাস্কার দ্বীপের কাছে এসে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়। একটি শাখা উত্তরে বেঁকে যায় এবং অপর দুটি শাখা হল- মোজাম্বিক স্রোত ও মাদাগাস্কার স্রোত।
মোজাম্বিক স্রোত :-শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহের একটি শাখা আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল দিয়ে মোজাম্বিক স্রোত নামে মোজাম্বিক প্রণালীর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয় ।
মাদাগাস্কার স্রোত :-শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহের অপর শাখাটি দক্ষিণ দিকে ঘুরে মাদাগাস্কার স্রোত নামে মাদাগাস্কার দ্বীপের পূর্ব দিক দিয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে প্রবাহিত হয় ।
আগুলহাস স্রোত :-মোজাম্বিক স্রোত ও মাদাগাস্কার স্রোত দুটি উত্তমাশা অন্তরীপের কাছে মিলিত হয়ে আগুলহাস স্রোত নামে প্রবাহিত হয় ও আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।
মৌসুমী এবং সোমালি স্রোত :-দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের যে শাখাটি উত্তরে বেঁকে যায় তা এখানকার মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঋতু অনুযায়ী গতি এবং দিক পরিবর্তন করে। একে মৌসুমী স্রোত বলে। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই স্রোত সোমালি স্রোত নামে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে প্রথমে আরব সাগর ও পরে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে সুমাত্রা পর্যন্ত প্রসারিত হয় । শীত কালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই স্রোত সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয় ।
ভারতীয় প্রতিস্রোত ভারত মহাসাগরে মৌসুমী স্রোত ও নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যভাগ দিয়ে একটি ক্ষীণ স্রোত বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। একে ভারতীয় প্রতিস্রোত বলে।
ভৌগলিক পরিবেশ ও মানুষের কাজকর্মের ওপর সমুদ্রস্রোতের নানা রকম প্রভাব দেখা যায় :-
হিমশৈল:সুমেরু মহাসাগর থেকে আগত লাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে এই মহাসাগরের উপকূলীয় হিমবাহগুলো থেকে বিশাল আকৃতির বরফের স্তূপ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভেসে আসে । সমুদ্রের জলে ভাসমান এই ধরনের প্রকান্ড বরফের স্তূপকে হিমশৈল বলে । এই সব বিশাল হিমশৈলের মাত্র ১/৯ ভাগ অংশ সমুদ্রের জলের ওপরে থাকে । এই রকম একটি হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগেই বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক তার প্রথম যাত্রাতেই গভীর সমুদ্রে ডুবে যায় ।
মগ্নচড়া:
হিমপ্রাচীর
সারগাসসা সি বা শৈবাল সাগর
প্ল্যাঙ্কটন: শীতল ও উষ্ণ স্রোতের সংযোগস্থলে একপ্রকার অতিক্ষুদ্র সামুদ্রিক কীট জন্মায়। এগুলি প্ল্যাঙ্কটন নামে পরিচিত।প্ল্যাঙ্কটন হলো মাছের প্রধান খাদ্য। প্ল্যাঙ্কটন দু রকমের হয়ে থাকে-