বারিমণ্ডল [Hydrosphere]

বারিমণ্ডল [Hydrosphere]পৃথিবীর পৃষ্ঠের মোট আয়তনের (৫১ কোটি ৫৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার ) ২৯ শতাংশ স্থলভাগ এবং বাকি ৭১ শতাংশ জলরাশি দ্বারা আবৃত । এই জলভাগেরই ভৌগলিক নাম বারিমণ্ডল [Hydrosphere]। মহাসাগর, সাগর, নদী, হ্রদ, খাল বিল প্রভৃতি ভূ-পৃষ্ঠের সকল জলভাগই এই বারিমন্ডলের অন্তর্গত।

মহাসাগর

  • ভু-পৃষ্ঠে প্রধান পাঁচটি জলভাগ আছে । এগুলি মহাসাগর নামে পরিচিত । (i) প্রশান্ত মহাসাগর, (ii) আটলান্টিক মহাসাগর, (iii) ভারত মহাসাগর, (iv) সুমেরু বা উত্তর মহাসাগর এবং (v) কুমেরু বা দক্ষিণ মহাসাগর ।
  • পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগর – প্রশান্ত মহাসাগর
  • পৃথিবীর গভীরতম স্থান – মারিয়ানা ট্রেঞ্চ (প্রশান্ত মহাসাগর)। এর গভীরতা ১১০৩৩ মিটার (৩৬১৯৯ফুট)।

সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ (Landforms of the Seafloor)ভূপৃষ্ঠের উপরের ভূমিরূপ যেমন উঁচু-নিচু তেমনি সমুদ্র তলদেশও অসমান। কারণ সমুদ্রতলে আগ্নেয়গিরি, শৈলশিরা, উচ্চভূমি ও গভীর খাত প্রভৃতি বিদ্যমান আছে। ফ্যাদোমিটার (Fathometer) যন্ত্রটি দিয়ে শব্দতরঙ্গের সাহায্যে সমুদ্রের গভীরতা মাপা হয়। ঢাল ও গভীরতার পার্থক্য অনুসারে সমুদ্রের তলদেশের ভূমিরূপকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা হয়-

  • মহীসোপান (Continental shelf) ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমে পৃথিবীর বৃহত্তম মহীসোপান অবস্থিত।
  • মহীঢাল (Continental slope)মহীসোপানের শেষ সীমা থেকে ভূভাগ হঠাৎ খাড়াভাবে নেমে সমুদ্রের গভীর তলদেশের সঙ্গে মিশে যায়। এ ঢালু অংশকে মহীঢাল বলে। সমুদ্রে এর গভীরতা ২০০ থেকে ৩,০০০ মিটার।
  • গভীর সমুদ্রের সমভূমি (Deep sea plain)মহীঢাল শেষ হওয়ার পর থেকে সমুদ্র তলদেশে যে বিস্তৃত সমভূমি দেখা যায় তাকে গভীর সমুদ্রের সমভূমি বলে। এর গড় গভীরতা ৫,০০০ মিটার।
  • নিমজ্জিত শৈলশিরা (Oceanic ridge)সমুদ্রের অভ্যস্তরে অনেকগুলো আগ্নেয়গিরি অবস্থান করছে। ঐসব আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বেরিয়ে এসে সমুদ্রগর্ভে সঞ্চিত হয়ে শৈলশিরার ন্যায় ভূমিরূপ গঠন করেছে। এগুলোই নিমজ্জিত শৈলশিরা নামে পরিচিত। নিমজ্জিত শৈলশিরাগুলোর মধ্যে মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
  • গভীর সমুদ্রখাত (Oceanic trench)গভীর সমুদ্রের সমভূমি অঞ্চলের মাঝে মাঝে গভীর খাত দেখা যায়। এ সকল খাতকে গভীর সমুদ্রখাত বলে। এদের গভীরতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,৪০০ মিটারের অধিক। প্রশান্ত মহাসাগরেই গভীর সমুদ্রখাতের সংখ্যা অধিক। এ সকল গভীর সমুদ্রখাতের মধ্যে গুয়াম দ্বীপের ৩২২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ম্যারিয়ানা খাত (Mariana trench) সর্বাপেক্ষা গভীর। এর গভীরতা প্রায় ১০,৮৭০ মিটার এবং এটাই পৃথিবীর গভীরতম খাত।

সমুদ্রস্রোত [Ocean Current]

সমুদ্রস্রোত [Ocean Current] :-পৃথিবীর আবর্তন, নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্র জলের লবণত্ব, ঘনত্ব ও উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য সমুদ্রের জল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়মিতভাবে সারাবছর নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয় । সমুদ্র জলের এই গতির নাম সমুদ্রস্রোত [Ocean current] ।

সমুদ্রস্রোতের উত্পত্তির কারণ :

  • নিয়ত বায়ূপ্রবাহ [Planetary or Permanent Wind]:-নিয়ত বায়ুপ্রবাহ হল সমুদ্র স্রোতের প্রধান কারণ । নিয়ত বায়ুপ্রবাহ নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্র স্রোতকেও নিজের গতিপথের দিকে টেনে নিয়ে যায়, যেমন: (i) যেসব স্থানে আয়নবায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে নিরক্ষরেখার দিকে সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয়, (ii) যেসব স্থানে পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব স্থানে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয়, আবার (iii) মেরুবায়ুর প্রভাবে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমে সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয় ।
  • পৃথিবীর আবর্তন গতি:- নিজের আবর্তন গতিতে পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে অবিরাম ঘুরে চলেছে । পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য ফেরেলের সূত্র অনুসারে বায়ুপ্রবাহের মতো সমুদ্রস্রোতেরও গতিবিক্ষেপ ঘটে এবং সমুদ্র স্রোত সরাসরি উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত হতে পারে না । পৃথিবীর আবর্তনের জন্য সমুদ্র স্রোতের গতি উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁ দিকে বেঁকে যায় ।
  • সমুদ্রের জলের ঊষ্ণতার তারতম্য:-নিরক্ষীয় অঞ্চলের সমুদ্রজল সূর্য কিরণে উত্তপ্ত এবং আয়তনে বর্ধিত ও হালকা হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠে উঁচু হয়ে ভেসে ওঠে এবং বহিঃস্রোত [Hot Surface Current] বা উষ্ণ-পৃষ্ঠ স্রোত হিসেবে শীতল মেরু প্রদেশের দিকে প্রবাহিত হয় এবং এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য মেরু অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত শীতল এবং ভারী জল সমুদ্রের নীচ দিয়ে শীতল অন্তঃস্রোত [Cold Under Current] হিসেবে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । এই ভাবে উষ্ণ ও শীতল অঞ্চলের মধ্যে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় ।
  • বাষ্পীভবন :-উষ্ণতার জন্য সমুদ্রের কোনো অংশে বাষ্পীভবন বেশি হলে সেখানে জলের অভাব পূরণ করার জন্য চারদিক থেকে শীতল স্রোত ছুটে আসে, ফলে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় ।
  • সমুদ্রজলের লবণত্ব ও ঘনত্বের তারতম্য :-সমুদ্রের জলে লবণের পরিমাণ সর্বত্র সমান নয় । সমুদ্র জলের লবণত্ব ও ঘনত্বের তারতম্যের জন্যেও সমুদ্রস্রোতের উৎপত্তি হয় । লবণাক্ততার সমতা আনার জন্য সমুদ্রের কম লবণাক্ত হালকা জল সমুদ্রের ওপরের অংশ দিয়ে বেশি লবণাক্ত ভারী জলের দিকে বহিঃস্রোত হিসেবে প্রবাহিত হয় । আবার সমুদ্রের বেশি লবণাক্ত ভারী জল কম লবণাক্ত হালকা জলের দিকে অন্তঃস্রোত হিসাবে প্রবাহিত হয় । এইভাবে মেরু অঞ্চলের বেশি লবণাক্ত জল নিরক্ষীয় অঞ্চলের কম লবণাক্ত জলের দিকে এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলের জল মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্র স্রোতের সৃষ্টি করে । আবার শীতল ও বেশি লবণাক্ত জল উষ্ণ ও কম লবণাক্ত জলের চেয়ে ভারী হওয়ায় বেশি লবণাক্ত ভারী জল নীচে নামে এবং কম লবণাক্ত হালকা জল ওপরে ওঠে । এইভাবে ওপর থেকে নীচে এবং নীচ থেকে ওপরে স্রোতের সৃষ্টি হয় ।
  • সমুদ্রোপকূলের ভূমিভাগের আকৃতি :বিভিন্ন মহাদেশ বা স্থলভাগের আকৃতি বিভিন্ন ধরনের । এর ফলে বিভিন্ন মহাদেশের উপকূলভাগ বা দ্বীপপুঞ্জে প্রতিহত হয়ে সমুদ্র স্রোতের গতি পরিবর্তিত হয় । সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হওয়ার সময়ে মহাদেশের কোনো অংশে অথবা কোনও দ্বীপ বা দ্বীপপুঞ্জে বাধাপ্রাপ্ত হলে সমুদ্রস্রোতের গতি পরিবর্তিত হয় ।
  • বিভিন্ন সমুদ্র স্রোতের মিলনস্থলে নতুন সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি:-বিভিন্ন সমুদ্র স্রোতের মিলনস্থলে জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়ে নতুন সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় । তবে এই ধরনের সমুদ্র স্রোতের ব্যাপকতা থাকে না এবং সাধারণত এগুলো সাময়িক স্রোত হিসেবেও পরিগণিত হয় ।

আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোত [Atlantic Ocean Current]:-

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোতগুলির নাম :-

নিরক্ষীয় স্রোত :-আটলান্টিক মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে দুটি উষ্ণ স্রোত, উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত উৎপন্ন হয়। দুটি স্রোতই পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়।

নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত:-উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্য দিয়ে একটি অপেক্ষাকৃত ক্ষীণ স্রোত পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। একে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বা বিপরীত স্রোত বলা হয়। গিনি উপসাগরে এই স্রোত গিনি স্রোত নামে পরিচিত।

কুমেরু স্রোত :-কুমেরু মহাসাগর থেকে শীতল কুমেরু স্রোত পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে এবং উওর দিকে প্রবাহিত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায় । একটি ফকল্যান্ড স্রোত এবং অপরটি বেঙ্গুয়েলা স্রোত।

ফকল্যান্ড স্রোত:- কুমেরু স্রোতের অপ্রধান শাখাটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়। ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এর নাম ফকল্যান্ড স্রোত।

বেঙ্গুয়েলা স্রোত [Benguela Current]:কুমেরু স্রোতের প্রধান শাখাটি কুমেরু স্রোত নামে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে প্রতিহত হয়ে বেঙ্গুয়েলা স্রোত নামে উত্তরমুখী হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে। উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে এই স্রোত দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।

ব্রাজিল স্রোত (উষ্ণ) :-বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত স্রোত পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের সেন্ট রক অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়। দক্ষিণের শাখাটি ব্রাজিল স্রোত নামে ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণদিকে অগ্রসর হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হয় ।

উপসাগরীয় স্রোত [Gulf Stream Current]:-বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহের উত্তরের শাখাটি ক্যারাবিয়ান সাগর অতিক্রম করে আরও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে। মেক্সিকো উপসাগর থেকে ফ্লোরিডা প্রণালীর মধ্য দিয়ে এই স্রোত উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। মেক্সিকো উপসাগরে উৎপত্তি হওয়ায় এই স্রোতের নাম উপসাগরীয় স্রোত । এই স্রোত আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়- ক্যানারী স্রোত, উত্তর আটলান্টিক স্রোত এবং তৃতীয় শাখাটি উপসাগরীয় স্রোত নামে গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিম পাশ দিয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে লাব্রাডার স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।

ক্যানারী স্রোত :- উপসাগরীয় স্রোতের দক্ষিণ শাখাটি ক্যানারী স্রোত নামে পর্তুগাল উপকূলে বাধা প্রাপ্ত হয়ে প্রথমে দক্ষিণে ও পরে পশ্চিমে বেঁকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।

উত্তর আটলান্টিক স্রোত :-উপসাগরীয় স্রোতের দ্বিতীয় বা মাঝের শাখাটি উত্তর-পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের পাশ দিয়ে অগ্রসর হয়ে নরওয়ের উত্তর উপকূলে এসে শেষ হয়। এই শাখাটি উত্তর আটলান্টিক স্রোত নামে পরিচিত।

ল্যাব্রাডার স্রোত [Labrador Current]:-মেরু বায়ুর প্রভাবে সুমেরু অঞ্চলের উত্তর মহাসাগর থেকে একটি শীতল স্রোত গ্রীণল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল দিয়ে শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে ও আর একটি স্রোত গ্রীণল্যান্ডের পূর্ব উপকূল দিয়ে গ্রীণল্যান্ড স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে । উভয় স্রোত দুটি ল্যাব্রাডার উপদ্বীপের কাছে মিলিত হয় এবং শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত নামে উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকুল দিয়ে দক্ষিণদিকে অগ্রসর হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে। তারপর নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে এসে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।

প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোত (Pacific Ocean Current)

প্রশান্ত মহাসাগর হল পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর । এর মোট আয়তন পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগের মিলিত আয়তনের চেয়েও বেশি । প্রশন্ত মহাসাগরকে দেখতে অনেকটা ত্রিভূজের মতো । প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোতগুলির বৈশিষ্ট্য লক্ষ করলে দেখা যায় (i) এই মহাসাগরের উত্তরভাগের স্রোতসমূহ ঘড়ির কাঁটার দিকে আবর্তিত হয় । (ii) কিন্তু দক্ষিণভাগের স্রোতসমূহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে আবর্তিত হয় ।

নিরক্ষীয় স্রোত :-আটলান্টিক মহাসাগরের মতো প্রশান্ত মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে দুটি উষ্ণ স্রোত, উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত উৎপন্ন হয়। দুটি স্রোতই পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়।

পেরু স্রোত বা হ্যামবোল্ড স্রোত :কুমেরু মহাসাগরের শীতল স্রোতের একটি শাখা পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বাধা পেয়ে চিলির উপকূল ধরে উত্তরদিকে পেরু উপকূলে এসে পেরু স্রোত বা শীতল হ্যামবোল্ড-স্রোত নামে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।

নিঊ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত (ঊষ্ণ) : পেরু স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত স্রোত পশ্চিমদিকে অগ্রসর হয়ে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়। (ক) একটি শাখা দক্ষিণদিকে ঘুরে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল ও নিঊজিল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় । (খ) অপর একটি শাখা উত্তর-পশ্চিমদিকে গিয়ে এশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে এবং পূর্ব-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে বাধা পায় এবং উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় । (গ) তৃতীয় শাখাটি উত্তর অস্ট্রেলিয়া ও নিউগিনির মধ্য দিয়ে ভারতমহাসাগরে প্রবেশ করে।

কুরোশিয়ো বা জাপান স্রোত:উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ইন্দোনেশিয়ার কাছে এসে উত্তরমুখী হয়ে এশিয়া মহাদেশের জাপান ও তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল ধরে জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোত নামে উত্তরে প্রবাহিত হয় । এই স্রোত কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দুভাগে বিভক্ত হয়। একটি শাখা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বেরিং স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় এবং ওপর শাখাটি হল উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত।

উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত:জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের অপর শাখাটি পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত নামে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়।

ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত:উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতটি কানাডার পশ্চিম উপকূলে পৌঁছানোর পর দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। একটি শাখা দক্ষিণ দিকে বেঁকে ক্যালিফোর্নিয়ার পাশ দিয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে শীতল ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত নামে প্রবাহিত হয় এবং আরও অগ্রসর হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।

আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত:উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতের অপর শাখাটি আরও উত্তরে অগ্রসর হয়ে আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত নামে আলাস্কা উপকূল ও অ্যালুশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বরাবর প্রবাহিত হয় । এই স্রোত পরে শীতল বেরিং স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।

বেরিং স্রোত (শীতল):মেরুবায়ুর প্রভাবে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের সুমেরু অঞ্চল থেকে আগত সুমেরু স্রোতের কিছু অংশ বেরিং প্রণালীর মধ্যে দিয়ে বেরিং স্রোত নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এই স্রোত আরও দক্ষিণে অগ্রসর হলে উষ্ণ জাপান স্রোতের উত্তর শাখার সঙ্গে মিলিত হয় । শীতল বেরিং স্রোত ও উষ্ণ জাপান স্রোতের মিলনের ফলে এই অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও ঝড়বৃষ্টির সৃষ্টি হয় ।

নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতিস্রোত (উষ্ণ):উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে একটি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও ক্ষীণ স্রোত পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় যা নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতি স্রোত নামে পরিচিত ।

ভারত মহাসাগরের স্রোত (Indian Ocean Current)

ভারত মহাসাগর আয়তনে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ । ভারত মহাসাগরের উত্তরে এশিয়া মহাদেশ, পশ্চিমে আফ্রিকা মহাদেশ এবং পূর্বে ওশিয়ানিয়া মহাদেশ দিয়ে ঘেরা । ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশ স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা থাকায় ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখানে সমুদ্র স্রোতের গতি অনেকটা পাল্টে যায় । গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলে মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ও শীত কালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয় । এজন্য ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশের স্রোত প্রধানত মৌসুমি বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশের স্রোতগুলি অনেকটা আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতের মতো আবর্তন করে ।

শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত :-কুমেরু মহাসাগর থেকে আগত শীতল কুমেরু স্রোতের একটি অংশ পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে উত্তরমুখী হয়ে শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত নামে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত নিরক্ষরেখার কাছে পৌঁছুলে দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে বেঁকে গিয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় । এই মিলিত স্রোত পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে মাদাগাস্কার দ্বীপের কাছে এসে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়। একটি শাখা উত্তরে বেঁকে যায় এবং অপর দুটি শাখা হল- মোজাম্বিক স্রোত ও মাদাগাস্কার স্রোত।

মোজাম্বিক স্রোত :-শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহের একটি শাখা আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল দিয়ে মোজাম্বিক স্রোত নামে মোজাম্বিক প্রণালীর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয় ।

মাদাগাস্কার স্রোত :-শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহের অপর শাখাটি দক্ষিণ দিকে ঘুরে মাদাগাস্কার স্রোত নামে মাদাগাস্কার দ্বীপের পূর্ব দিক দিয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে প্রবাহিত হয় ।

আগুলহাস স্রোত :-মোজাম্বিক স্রোত ও মাদাগাস্কার স্রোত দুটি উত্তমাশা অন্তরীপের কাছে মিলিত হয়ে আগুলহাস স্রোত নামে প্রবাহিত হয় ও আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।

মৌসুমী এবং সোমালি স্রোত :-দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের যে শাখাটি উত্তরে বেঁকে যায় তা এখানকার মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঋতু অনুযায়ী গতি এবং দিক পরিবর্তন করে। একে মৌসুমী স্রোত বলে। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই স্রোত সোমালি স্রোত নামে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে প্রথমে আরব সাগর ও পরে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে সুমাত্রা পর্যন্ত প্রসারিত হয় । শীত কালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই স্রোত সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয় ।

ভারতীয় প্রতিস্রোত ভারত মহাসাগরে মৌসুমী স্রোত ও নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যভাগ দিয়ে একটি ক্ষীণ স্রোত বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। একে ভারতীয় প্রতিস্রোত বলে।

সমুদ্রস্রোতের প্রভাব (Impact of Ocean Current)

ভৌগলিক পরিবেশ ও মানুষের কাজকর্মের ওপর সমুদ্রস্রোতের নানা রকম প্রভাব দেখা যায় :-

  • উষ্ণতার বৃদ্ধি : যে উপকূলের পাশ দিয়ে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয় সেখানকার জলবায়ু উষ্ণ হয়ে থাকে । নরওয়ের উপকূল উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে সারা বছর ধরে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় উষ্ণ থাকে।
  • উষ্ণতার হ্রাস : শীতল স্রোত উপকূলের জলবায়ুকে অপেক্ষাকৃত শীতল রাখে । শীতল লাব্রাডার স্রোতের প্রভাবে লন্ডনের চেয়ে নিম্ন অক্ষাংশে অবস্থিত হয়েও শীতকালে নিউ ইয়র্কে তীব্র শীত বোধ হয়। কিন্তু উষ্ণ স্রোতের (উত্তর আটলান্টিক স্রোত) প্রভাবে লন্ডনে এত শীত পড়ে না
  • বৃষ্টিপাত : উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাতে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে। তাই ঐ বায়ু স্থলভাগের এসে পৌঁছালে তাতে বৃষ্টিপাত ঘটায় ।
  • মরুভূমির সৃষ্টি :ক্রান্তীয় অঞ্চলে শীতলস্রোত প্রভাবিত মহাদেশগুলির পশ্চিমাংশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কমে গিয়ে উয় মরুভূমি সৃষ্টি করে। যেমন—কালাহারি, সােনেরান, আটাকামা প্রভৃতি মরুভূমি সৃষ্টির অন্যতম কারণ শীতলস্রোত।
  • ঘন কুয়াশা ও ঝড়-ঝঞ্ঝার সৃষ্টি : উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য ঘন কুয়াশা এবং প্রবল ঝড় তুফানের সৃষ্টি হয়। এই কারণে নিউফাউন্ডল্যান্ড ও জাপানের কাছে ঘন কুয়াশা ও প্রবল ঝড় তুফানের সৃষ্টি হয় বলে এই অঞ্চলে জাহাজ চলাচল বিপজ্জনক ।
  • জাহাজ চলাচলের সুবিধা ও অসুবিধা : স্রোতের অনুকূলে জাহাজ চালানো সুবিধাজনক কিন্তু প্রতিকূলে জাহাজ চালানো কষ্টকর ।
  • বন্দরে বরফমুক্ত অবস্থা : উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে শীতপ্রধান দেশের বন্দর ও পোতাশ্রয় বরফ মুক্ত থাকে ।
  • মৎস্য ব্যবসা : উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে এবং মগ্ন চড়ার কাছে সমুদ্রে প্ল্যাঙ্কটন ও মাছের অন্যান্য খাদ্য বেশি পাওয়া যায় । ফলে সামুদ্রিক মাছের ঝাঁক উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে বাস করে । এইজন্য নিউফাউন্ডল্যান্ড, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, নরওয়ে ও জাপানের উপকূলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মত্সচারণ ক্ষেত্রগুলি গড়ে উঠেছে ।

হিমশৈল:সুমেরু মহাসাগর থেকে আগত লাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে এই মহাসাগরের উপকূলীয় হিমবাহগুলো থেকে বিশাল আকৃতির বরফের স্তূপ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভেসে আসে । সমুদ্রের জলে ভাসমান এই ধরনের প্রকান্ড বরফের স্তূপকে হিমশৈল বলে । এই সব বিশাল হিমশৈলের মাত্র ১/৯ ভাগ অংশ সমুদ্রের জলের ওপরে থাকে । এই রকম একটি হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগেই বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক তার প্রথম যাত্রাতেই গভীর সমুদ্রে ডুবে যায় ।

মগ্নচড়া:

  • উষ্ণ স্রোত এবং শীতল স্রোতের মিলনস্থলে শীতল স্রোত বাহিত হিমশৈল উষ্ণ স্রোতের সমুদ্র সংস্পর্শে এসে গলে যায় এবং হিমশৈল বাহিত কাদা ও শিলা সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে ।
  • উদাহরণ: শিতল লাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে সুমেরুবৃত্ত থেকে আসা হিমশৈলগুলোর মধ্যে ছোটো বড়ো শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর ও কাদা মিশ্রিত থাকে । নিউফাউল্যান্ডের কাছে শীতল লাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের মিলন স্থলে এই স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈলগুলো গলে যায় । এই সব হিমশৈলগুলোর মধ্যে থাকা নুড়ি, পাথর, কাঁকড়, কাদা প্রভৃতি থিতিয়ে পড়ে নিউফাউল্যান্ডের পূর্ব-উপকূলে সমুদ্রবক্ষে সঞ্চিত হয়ে ‘গ্রান্ড ব্যাঙ্ক, নামে বিখ্যাত মগ্নচড়ার সৃষ্টি করেছে । সেবল ব্যাংক, জর্জেস ব্যাংক।
  • গ্রান্ড ব্যাঙ্কের জলের গভীরতা ২০০ মিটার এবং আয়তন প্রায় ৩৭ হাজার বর্গকিলোমিটার ।
  • মগ্নচড়া অঞ্চলগুলির উষ্ণ ও শীতল স্রোতের সংযোগস্থলে প্ল্যাঙ্কটন নামে এক ধরনের আণুবীক্ষণিক জীব প্রচুর পরিমাণে জন্মায় যা মাছের প্রধান খাদ্য । অর্থাৎ মাছের বসবাসের উপযোগী অনুকূল উষ্ণতা ও খাদ্যের অফুরন্ত যোগান থাকাতে মগ্নচড়াগুলিতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় । উদাহরণ:-আটলান্টিক মহাসাগরের গ্রান্ড ব্যাঙ্ক মগ্নচড়াটি হল পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য চাষ কেন্দ্র ।

হিমপ্রাচীর

  • আটলান্টিক মহাসাগরের নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট (হ্যালিফক্স ও কড অন্তরীক্ষের মাঝে) উত্তর দিকে (ব্যাকিন উপসাগর) থেকে আগত শীতল ও গাঢ় সবুজ জলের শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত এবং উপসাগরীয় স্রোতের উষ্ণ ও গাঢ় নীল জল বেশ কিছু দূর পর্যন্ত পাশাপাশি কিন্তু বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়েছে । এই দুই বিপরীতমুখী স্রোতের মাঝে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা স্পষ্ট দেখা যায়, এই সীমারেখাকে হিমপ্রাচীর বলে । কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত আটলান্টিক মহাসাগরে হিমপ্রাচীরের সীমারেখা বহুদূর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায় ।
  • বিপরীতমুখী দুই সমুদ্রস্রোতের উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য এই অঞ্চলে প্রায়ই ঘন কুয়াশা ও প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয় ।
  • একই ভাবে জাপানের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ কুরেশিয়ো বা জাপান স্রোত এবং শীতল ওয়াশিয়ো স্রোতের মিলনস্থলে বছরের প্রায় সবসময় কুয়াশা জমে থাকে ।

সারগাসসা সি বা শৈবাল সাগর

  • নিয়ত বায়ু দ্বারা পরিচালিত সমুদ্রস্রোত অনেক সময় সমুদ্রের মধ্যবর্তী অংশে স্রোতের আবর্ত বা ঘূর্ণির সৃষ্টি করে। আবর্তের মধ্যবর্তী অংশ স্রোতহীন হওয়ায় সামুদ্রিক আগাছা ও শৈবাল জন্মায়। স্রোতহীন, আগাছা সমৃদ্ধ সমুদ্রের ওই অংশকে সারােগাসাে সি বা শৈবাল সাগর বলে।
  • আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে ১) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত, ২) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং ৩) ক্যানারি স্রোত মিলিত হয়ে কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে শৈবাল সাগর সৃষ্টি করে ।
  • আটলান্টিক মহাসাগর ছাড়াও উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরেও ১) উত্তর প্রশান্ত-মহাসাগরীয় স্রোত, ২) কুরোশিয়ো বা জাপান স্রোত, ৩) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং ৪) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোতের মাঝখানে প্রকান্ড একটি শৈবাল সাগর দেখা যায় ।

প্ল্যাঙ্কটন: শীতল ও উষ্ণ স্রোতের সংযোগস্থলে একপ্রকার অতিক্ষুদ্র সামুদ্রিক কীট জন্মায়। এগুলি প্ল্যাঙ্কটন নামে পরিচিত।প্ল্যাঙ্কটন হলো মাছের প্রধান খাদ্য। প্ল্যাঙ্কটন দু রকমের হয়ে থাকে-

  • উদ্ভিজ্জ প্ল্যাঙ্কটন : উদ্ভিজ্জ প্ল্যাঙ্কটন সরাসরি সূর্যকিরণ থেকে সালোক-সংশ্লেষ এর মাধ্যমে পুষ্টি সাধন করে।
  • প্রাণিজ প্ল্যাঙ্কটন : প্রাণিজ প্ল্যাঙ্কটন উদ্ভিজ্জ প্ল্যাঙ্কটনদের খাদ্যরূপে গ্রহণ করে পুষ্টি সাধন করে।