জাহাঙ্গীর ( ১৬০৫-১৬২৭ খ্রিঃ ) :

জন্ম ও বংশ পরিচয়:-

  • ১৫৬৯ সালের ৩১ আগস্ট ফতেপুর সিক্রিতে জন্মগ্রহণ করেন, পিতার নাম আকবর এবং মাতা আম্বাররাজা ভর্মলের কন্যা মরিয়ম-উজ-জামানি ।
  • জাহাঙ্গীর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল তিনি শের আফগানির বিধবা স্ত্রী মেহেরুন্নিসাকে ১৬১১ খ্রিঃ বিবাহ করেন । তার নাম দেন নুরজাহান বা জগতের আলো । জাহাঙ্গীর সিংহাসনের পিছনে প্রকৃত শক্তি ছিল তার ।
  • তিনি ছিলেন মুঘল আমলে প্রথম সম্রাজ্ঞী যাকে নিজ গুণের জন্য ‘পাদশাহ বেগম ’বলা হত । সেই সময়কার মুদ্রাতে জাহাঙ্গীর এর সঙ্গে নুরজাহানের ছবিও ছাপা হত।
  • নুরজাহান তার পিতা মির্জা গিয়াস বেগ , ভ্রাতা আসফ খাঁ ও যুবরাজ খুররম কে নিয়ে চক্র তৈরি করেছিল । যুবরাজ খুররমের সহিত তার ভ্রাতুস্পুত্রী মমতাজের বিবাহ দেন । তিনি তার পিতা মির্জা গিয়াস বেগকে সাত হাজারি ও ভ্রাতা আসফকে ছয় হাজারি মনসবদারের পদে নিযুক্ত করেন ।
  • জাহাঙ্গীর এর ১৭ জন স্ত্রী ছিল এর মধ্য উল্লেখযোগ্য হল নুর জাহান, শাহিব-ই- জামাল, তাজ বিবি মিলকিস মাকানি। জাহাঙ্গীর পুত্র খসরু, পারভেজ, শাহজাহান।

সিংহাসন আরোহন:-

  • যুবরাজ সেলিম ৩৬ বছর বয়েসে তার বাবার মৃত্যুর ৮ দিন পর ৩০ নভেম্বর, ১৬০৫ সালে সিংহাসনে আরোহন করেন এবং নিজেকে নুরুদ্দিন মহম্মদ জাহাঙ্গীর বাদশাহ গাজী উপাধিতে ভূষিত করেন।

সাম্রাজ্য বিস্তার:-

  • প্রথম বছরেই তার বড় ছেলে খসরু বিদ্রোহ করলে তাঁকে বন্দী করা হয় এবং পরে হত্যা করা হয়।
  • তিনি পঞ্চম শিখ গুরু অর্জুন সিংহকে হত্যা করেন । কারণ গুরু অর্জুন জাহাঙ্গীরের বিদ্রোহী পুত্র খসরুকে আশ্রয় দিয়েছিলেন ।
  • রানা অমর সিংহ ( মহারানা প্রতাপের পুত্র ) ১৬১৫ খ্রিঃ জাহাঙ্গীরের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেন এবং তার পুত্র করণ সিংহকে মুঘল সাম্রাজ্যের মনসবদার পদে নিযুক্ত করেন ।
  • জাহাঙ্গীর ও শাহজাহানের মধ্যে বিবাদের সুযোগ নিয়ে পারস্য অঞ্চলের সাফারীদ রাজবংশের শাহেনশাহ আব্বাস কান্দাহার জয় করেন। এর ফলে মুঘলরা আফগানিস্তান ও পারস্য এর মূল্যবান বাণিজ্যিক রুট গুলি নিজেদের অধীন থেকে হারিয়ে ফেলেন।
  • সম্রাটের ভাই আলাউদ্দীন বাংলার বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন। আলাউদ্দীনকে ইসলাম খান উপাধি দেওয়া হয়।

সাহিত্যচর্চা:-

  • জাহাঙ্গীর তুজুক- ই - জাহাঙ্গীর নামে তার আত্মজীবনী রচনা করেন।
  • জাহাঙ্গীর সময় উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো - মাসরি -ই- জাহাঙ্গীর , ইকবাল নামা -ই - জাহাঙ্গীর ।
  • জাহাঙ্গীরের সভাকবি ছিলেন আবু তালিব কালিম।

স্থাপত্য :-

  • জাহাঙ্গীরের সময় নুরজাহান, আগ্রাতে ইতিমাদ উদ দৌলার(মির্জা গিয়াস বেগ) স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করেন ।
  • লাহোরে মতি মসজিদ নির্মাণ করেন।
  • কাশ্মীরে শালিমার বাগ নির্মাণ করেন।

বিদেশী পর্যটক :-

  • ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হকিন্স ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরের দরবারে আসেন এবং তাকে ৪০০টি মনসবদার দেওয়া হয়।
  • ইংলন্ডের রাজা প্রথম জেমসের দূতরূপে স্যার টমাস রো ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরের দরবারে আসেন এবং জাহাঙ্গীর তাকে সুরাটে কারখানা তৈরির অনুমতি দেন।

শেষ জীবন :-

  • ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর থেকে ফিরে আসার পথে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয় এবং লাহোরের নিকটে শাহদারাতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।