বাংলার ইতিহাস (১৭১৭-১৭৭২)

মুর্শিদকুলী খাঁ (১৭১৭-১৭২৭) :

  • ঔরঙ্গজেব মুর্শিদকুলী খাঁকে বাংলার দেওয়ান হিসাবে নিযুক্ত করেন ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে।
  • ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে সুবাদার ও দেওয়ান পদে মুর্শিদকুলী খাঁকে নিয়ােগ করেন ফারুকশিয়র।
  • ১৭১৯ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যার গভর্নর নিয়ােগ করা হয় মুর্শিদকুলী খাঁকে।
  • মুর্শিদকুলী খাঁ রাজধানী ঢাকা থেকে মকসুদাবাদ বা মুর্শিদাবাদে নিয়ে যান।
  • ১৭১৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংরেজদের দুর্গ নির্মাণ করতে নিষেধ করেন।
  • ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা শাহসুজার কাছ থেকে ৩০০০ টাকার বিনিময়ে যে বাণিজ্য করার অনুমতি পান মুর্শিদকুলী খাঁ তার বিরােধিতা করেন।
  • ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে জন সুরম্যান যে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার ফরমান পান তার কোন বিশেষ সুবিধা নিতে পারেন নি মুর্শিদকুলী খাঁর কাছে থেকে।
  • তিনি বিদ্রোহী জমিদারদের দমন করার জন্য আইন প্রণয়ন করেন। তার রাজস্ব প্রথা মালজামিনী ব্যবস্থা নামে পরিচিত।

সুজাউদ্দীন (১৭২৭-১৭৩৯) :

  • ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ শাহ সুজাউদ্দীনকে বিহারের শাসনকর্তা নিয়ােগ করেন। এরফলে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা সুজাউদ্দীনের অধীনে আসে।
  • সুজাউদ্দীনের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন আলম চাঁদ, ফতেচাঁদ, জগতশেঠ, আলিবর্দী খান ও হাজি আহম্মদ।
  • তিনি কোম্পানীর লবণ আটক করে বহু শুল্ক আদায় করেন।

সরফরাজ খাঁ (১৭৩৯-১৭৪০) :

  • সুজাউদ্দীন এর পুত্র সরফরাজ খাকে হত্যা করে ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার মসনদে বসেন বিহারের শাসক আলিবর্দী খাঁ।

আলিবর্দী খাঁ (১৭৪০-১৭৫৬) :

  • তিনি মুঘল সম্রাট মহম্মদ শাহের কাছ থেকে ২কোটি টাকার বিনিময়ে নবাবি পদকে বৈধকরণের ফরমান নেন।
  • তার সময় মারাঠারা বারবার বাংলা আক্রমণ করে।
  • তিনি মারাঠা রঘুজি ভোসলের সঙ্গে সন্ধি করেন এবং উড়িষ্যার কিছু অংশের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব মারাঠাদের দেন এবং বার্ষিক দুলক্ষ টাকা চৌথ দেওয়ার অঙ্গীকারবদ্ধ হন ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে।
  • কলকাতা ও চন্দননগরে তিনি দুর্গ নির্মাণ থেকে ইংরেজ ও ফরাসীদের বিরত থাকতে আদেশ দেন।
  • ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে ঘেরিয়ার যুদ্ধে সরফরাজকে পরাস্ত করে হত্যা করেন।
  • ১৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘলরা অর্থের দাবী করলে তিনি দিতে অস্বীকার করেন।

সিরাজ-উদ-দৌলা (১৭৫৬-১৭৫৭) :

  • সিরাজের পিতার নাম ছিল জৈনুদ্দিন ও মাতার নাম ছিল আমিনা বেগম। পূর্ণিয়ার শাসক শওকত জও, ঢাকার শাসনকর্তার বিধবা পত্নী সিরাজের মাসি ঘসেটি বেগম এবং প্রধান সেনাপতি মিরজাফর আলি খান সিরাজের বিরােধিতা করতে থাকেন। ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভ ঘসেটি বেগমকে সমর্থন করেন।
  • সিরাজ ইংরেজ ও ফরাসীদের দুর্গ নির্মাণে নিষেধ করলে ফরাসীরা তা পালন করলেও ইংরেজরা তা অগ্রাহ্য করে।
  • রাজবল্লভের নির্দেশে তার পুত্র কৃষ্ণদাস প্রচুর ধনরত্ন সহ কলকাতার ইংরেজ গভর্নর ড্রেকের কাছে আশ্রয় নেন।
  • ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে ৪ জুন সিরাজ কাশিমবাজার এবং ২০ জুন কলকাতা অধিকার করেন। ইংরেজ গভর্নর ড্রেক সহ অধিকাংশ ইংরেজ ফলতায় পালিয়ে যান।
  • কলকাতার দায়িত্ব মানিক চাদের উপর দিয়ে সিরাজ মুর্শিদাবাদে ফিরে যান।
  • হলওয়েল নামে জনৈক ইংরেজ কর্মচারী বলেন যে সিরাজ ১৪৬ জন বন্দীকে ২০ জুন রাত্রে ১৮x১৪’১০” একটি কক্ষে বন্দী করেন। এরফলে ১২৩ জন মারা যান শ্বাসকষ্টে। এই ঘটনা ‘অন্ধকূপ হত্যা’ নামে পরিচিত।
  • সিরাজ কলকাতার নাম রাখেন আলিনগর।
  • সিরাজের বিরুদ্ধে মীরজাফর, মানিকচাঁদ, উমিচাঁদ, রায় দুর্লভ, জগৎশেঠ প্রমুখ ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। মাদ্রাজের কর্ণেল ক্লাইভ ও অ্যাডমিরাল ওয়াটসন কলকাতা পতনের খবর পেয়ে কলকাতার দিকে আসেন ও ২ জানুয়ারি ৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা দখল করে নেন।
  • সিরাজ-উদ-দৌলা কলকাতা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রস্তুতি নেন। ৫ ফেব্রুয়ারী ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্লাইভের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন।
  • আহম্মদশাহ আবদালীর পূর্বভারত আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিলে সিরাজ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ৯ ফেব্রুয়ারী ইংরেজদের সঙ্গে আলিনগরের সন্ধি করেন।
  • পলাশির যুদ্ধ (১৭৫৭) : ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ২৩ জুন মুর্শিদাবাদ থেকে ২০ মাইল দূরে পলাশী নামক প্রান্তরে নবাব সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের সংঘর্ষ বাধে। এই যুদ্ধে নবাব ও ইংরেজপক্ষে ঠিককত সৈন্য সংখ্যা ছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। সিরাজের পক্ষে মীরমদন ও মােহনলাল যুদ্ধ করেন। মীরমদন যুদ্ধে নিহত হন। মীরজাফর, রায়দুর্লভ যুদ্ধ থেকে বিরত থাকেন। ৩০ জুন রাজমহলের কাছে ফকির দানাশাহ সিরাজকে ধরিয়ে দিলে সিরাজকে মুর্শিদাবাদে আনা হয়। মিরজাফরের পুত্র মিরণের নির্দেশে মহম্মদি বেগ সিরাজকে হত্যা করেন।

মীরজাফর (১৭৫৭-১৭৬০) :

  • মীরজাফর বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় কোম্পানিকে মুক্ত বাণিজ্যের অধিকার দেন ও ২৪ পরগনার জমিদারি সত্ত্ব কোম্পানিকে দান করেন।
  • তিনি কোম্পানিকে ১৭.৭ মিলিয়ন টাকা দেন কলকাতা আক্রমণের ক্ষতিপূরণ হিসাবে।
  • তিনি ইংরেজদের বিতাড়িত করার জন্য ডাচ বা ওলন্দাজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এই অভিযােগ দিয়ে ইংরেজরা ১৭৫৯ খ্রীষ্টাব্দে বিদারার যুদ্ধে ডাচদের পরাস্ত করে।
  • ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ভ্যান্সিটার্ট মীরজাফরকে সরিয়ে তার জামাতা মীরকাশিমকে মসনদে বসান।

মীরকাশিম (১৭৬০-১৭৬৩) :

  • ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে একটি গােপন চুক্তির দ্বারা তিনি মসনদে বসেন।
  • মীরকাশিম কোম্পানিকে বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রামের জমিদারী সত্ত্ব দান করেন এবং ২৯ লক্ষ টাকা দেন।
  • ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গেরে নিয়ে যান।
  • তিনি বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ-আলমের কাছ থেকে নবাবী ফরমান আনেন।
  • তিনি দস্তকের অপব্যবহার বন্ধে সচেষ্ট হন। সমরু ও মার্কার নামে দুজন ইউরােপীয় সেনাপতির সাহায্যে তিনি তার বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করেন।
  • ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে মীরকাশিম ইংরেজ সেনাপতি মেজর অ্যাডামসের কাছে কাটোয়া, গিরিয়া ও উদয়নালার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে অযােধ্যায় পালিয়ে যান।
  • অযােধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও দিল্লীর সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে মিলিত হয়ে মীরকাশিম ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন কিন্তু যুদ্ধের আগেই মীরকাশিম শিবির ছেড়ে পালিয়ে যান। বক্সারের যুদ্ধে তার বাহিনী সুজাউদ্দৌলা ও দ্বিতীয় শাহ আলমের বাহিনী পরাস্ত হয়।

মীরজাফর (১৭৬৩-১৭৬৫) :

  • মীরকাশিমের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর সময় মীরজাফরকে বাংলার মসনদে আবার বসানাে হয় ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে।
  • মীরজাফর কোম্পানীর কর্মচারীদের কর থেকে মুক্তি দেন।
  • কোম্পানিকে তিনি ৩০ লক্ষ টাকা দেন।
  • ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে মীরজাফরের মৃত্যু হয়।

নজমউদ্দৌলা (১৭৬৫-১৭৭২) :

  • মীরজাফরের মৃত্যুর পর তার পুত্র নজমউদ্দৌলাকে মসনদে বসানাে হয় ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে।
  • তার সময়ে ক্লাইভ দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
  • ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানী নজমউদ্দৌলাকে পেনশন দিয়ে বাংলায় শাসনভার গ্রহণ করে।