হুমায়ুন (১৫৩০-৪০ এবং ১৫৫৫-৫৬ খ্রিঃ):

জন্ম ও বংশ পরিচয়:-

  • 1508 খ্রিস্টাব্দের 6 ই মার্চ বাররে তৃতীয় স্ত্রী মহোম বা মাহাম বেগমের গর্ভে কাবুলে (বর্তমানে আফগানিস্থান) জন্মগ্রহণ করেন দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট হুমায়ুন ।
  • হুমায়ুন ছিলেন বাবরের জ্যেষ্ঠ পুত্র।
  • হুমায়ুন কথার অর্থ “ভাগ্যবান” বা “সৌভাগ্যবান”।

সিংহাসন আরোহন:-

  • 1530 খ্রিস্টাব্দের 26 শে ডিসেম্বর পিতা বাবরের মৃত্যুর পর নাসিরুদ্দিন হুমায়ুন মাত্র 22 বছর বয়সে দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু তাঁর রাজ্যভিষেক হয় 29 শে ডিসেম্বর আগ্রাতে।
  • হুমায়ুন ‘ ইসান – ই – কামিল ’ ( প্রকৃত মানুষ ) উপাধি ধারণ করেন ।
  • দিনপানাহ দিল্লিতে তার দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন ।

সাম্রাজ্য বিস্তার:-

  • 1530 খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহনের সঙ্গে সঙ্গে তার সৎভাই কামরান বিদ্রোহ ঘোষণা করেন কিন্তু তাকে বাধা না দিলে কামরান সিন্ধু নদ অতিক্রম করে পাঞ্জাব দখল করে নেন।ফলে কাবুল-কান্দাহার ও পাঞ্জাব মির্জা কামরানের দখলে চলে আসে।
  • 1531 খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন বুন্দেলখণ্ডের কালিঞ্জর দুর্গ জয় করেন হিন্দু অধিপতি প্রতাপরুদ্রকে পরাজিত করে।
  • 1532 খ্রিস্টাব্দে আফগান সুলতান ইব্রাহিম লোদীর ভ্রাতা মাহমুদ লোদীকে “দৌহারিয়ার যুদ্ধে” হুমায়ুন পরাজিত করে এবং পরে চুনার দুর্গ জয় করার চেষ্টা করলে শের খাঁ হুমায়ুনের বশ্যতা মৌখিকভাবে স্বীকার করে চুনার দুর্গ রক্ষা করেন।
  • 1534 খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে হুমায়ুন আগ্রা থেকে গোয়ালিয়োরে চিতোর অধিকার করেন।
  • গুজরাটের অধিপতি বাহাদুর শাহ শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন হুমায়ুনের বিরুদ্ধে।সর্বপ্রথমে বাহাদুর শাহ মেবারের রানার সাহায্যে মালব দখল করেন।এরপর তিনি আহম্মদনগর,খান্দেশ ও বেরারের শাসকদের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করেন।এমনকি তিনি পর্তুগিজদের কর প্রদানে বাধ্য করেন। হুমায়ুন বাহাদুর শাহকে জব্দ করার জন্য গুজরাট আক্রমণ করেন বাহাদুর শাহ 25 শে এপ্রিল গুজরাটের মান্ড নগরী থেকে পলায়ন করেন।1535 খ্রিস্টাব্দের 20 এপ্রিল বাহাদুর শাহ হুমায়ুনের সঙ্গে যুদ্ধে বিপর্যস্ত হন।হুমায়ুন চম্পানীর দুর্গ অধিকার করেন।এর ফলে মালব গুজরাট হুমায়ুনের দখলে চলে আসে।
  • হুমায়ুনের ভাই মির্জা আশকারীকে গুজরাটের শাসক হিসেবে নিয়োগ করেন।আহমেদাবাদ ছিল আশকারীর প্রধান কেন্দ্র এবং তাঁর প্রধান উপদেষ্টা ছিল হিন্দু বেগ।কিন্তু বাহাদুর শাহের গভর্নর মানুখান আশকারীর কাছ থেকে গুজরাট পুনরায় দখল করে নেন।
  • 1537 খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন চুনার দুর্গ জয় করেন রুমি খানের (ইনি ছিলেন বাহাদুর শাহের সেরা বন্দুকবাজে) সাহায্যে।
  • ১৫৩৯ খ্রিঃ চৌসার কাছে শেরশাহ হুমায়ুনকে আক্রমণ করে এবং চৌসার যুদ্ধে হুমায়ুন ভিষণভাবে পরাজিত হয় এবং কোনাে প্রকারে জলের ব্যাগে পালিয়ে আগ্রায় ফিরে আসে । কিন্তু ১৫৪০ খ্রিঃ কনৌজ বা বিলগ্রামর যুদ্ধে হুমায়ুন শেরশাহের নিকট পরাজিত হয় এবং প্রথমে অমরকোট ও পরে পারস্যে পালিয়ে যায় ।
  • 1545 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে তহমাস্প্ এর সহযোগিতায় হুমায়ুন কান্দাহার দখল করেন। বৈরাম খাঁকে কান্দাহারের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন।
  • 1546 খ্রিস্টাব্দের 18 ই নভেম্বর হুমায়ুন কাবুলে প্রবেশ করেন।
  • ১৫৫৫ খ্রিঃ তার দক্ষ সেনাপতি বৈরাম খাঁর সহায়তায় প্রথম লাহাের অধিকার করেন এবং ওই বছর ২৩ জুলাই শুর রাজা সিকান্দার শুরকে পরাজিত করে দিল্লি ও আগ্রা দখল করে মুঘল সাম্রাজ্যে পুনপ্রতিষ্ঠা করেন এবং শুর সাম্রাজ্যের পতন ঘটে ।

সাহিত্যচর্চা:-

  • হুমায়ুনের , বোন গুলবদন বেগম ( বৈমাত্রেয় ) ফার্সী ভাষায় হুমায়ুন নামা লিখেছিলেন ।
  • হুমায়ুনের বন্ধু জহর আফতাচি হুমায়ুনকে নিয়ে লেখেন “তারিখ-ই-হুমায়ুনি”।

স্থাপত্য:-

  • হুমায়ূনের বিধবা পত্নী হাজী বেগম হুমায়ূনের সমাধিস্তম্ভ তৈরি করেন যা তাজমহলের প্রোটোটাইপ হিসাবে পরিচিত।

শেষ জীবন :-

  • দিল্লি দখলের সাত মাস পর 1556 খ্রিস্টাব্দের 24 শে জানুয়ারি দিল্লীর দিন পনাহ্ বা শের মণ্ডলের গ্রন্থগারের সিঁড়ি থেকে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং 26 শে জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। ঐতিহাসিক লেনপুল বলেছিলেন “ হুমায়ুন জীবনকে সমস্যার মধ্যে ছুড়ে দেয় এবং সে নিজেই এটি থেকে মুক্ত করে । ”